কুরবানি হওয়া পশু

#শেষ_মূহুর্ত
হটাৎ আমার পিঠে হাতের স্পর্শ পেলাম। পায়ে দড়ির ছোঁয়া। স্থীর হয়ে গেলাম। আমি কুরবানি হতে চলেছি। স্রষ্টাকে খুব কাছে মনে হল। মনে হল হাত বাড়ালেই আমার আল্লাহ্‌কে অনুভব করব। এইতো আর কিছুক্ষণ। কিছুটা মূহুর্ত মাত্র!
আমি মাটিতে পড়ে গেলাম!
আল্লাহু আকবর...আল্লাহু আকবর! আর কিছু মনে নেই! সব অন্ধকার হয়ে গেল। চোখের সামনে ভেসে এলো শুধু আলো আর আলো! ইশ এতো আলো!
আমি চলে এলাম এপারে। আমার স্রষ্টার কাছে। হে মহান, শুকরিয়া জানাই তোমার দরবারে। আমাকে তোমার কুরবানির জন্য মনোনিত করেছো বলে! কসাইয়ের ছুরির নিচে পড়ে অন্যের উদরে যাওয়ার চেয়ে, এভাবে কুরবানি হওয়া সত্যিই অনেক সৌভাগ্যের!
সুখের আনন্দে ভাসছি আমি। দূর থেকে দেখছি শুধু আমার নিথর দেহটাকে। এখনো নড়ছে আমার পা, কাঁপছে আমার শরীরের মাংস গুলো। ওহে মানব, একটু খানি অপেক্ষা কর। দেহ থেকে আমার প্রাণটা বের হওয়ার একটু সুযোগ দাও!

কিছুক্ষণের মধ্যেই চামড়াবিহীন নিথর একখন্ড মাংসপিন্ড আমি।এক সময় সেটাও উধাও হয়ে গেল। পড়ে রইল শুধু রক্তগুলো! কে বা কারা এসে সেগুলোকেও ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন করে দিল!
হে মানুষ,
ধন্যবাদ তোমাদের। তোমাদের উসিলায় আমি আজ কুরবান হতে পেরেছি। আল্লাহ্‌ আমাকে নির্বাচিত করে তোমাদের বাঁচিয়েছেন। আমার সব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দিলেও প্লিজ ভুল না আমায়।
মনে রেখ,
আমি কুরবানি হয়ে তোমার পূণ্যের ভাগ বাড়াই, আমি কসাইর ছুরির নিচে গিয়ে তোমার পেটের খুধা মেটাই, রসনার তৃপ্তি বাড়াই!
আর যখন আমায় মনে পড়বে না। তখন তোমার পরনের ঐ জেকেট, হাত ঘড়ির ঐ ফিতা, কোমরের ঐ বেল্ট, পায়ের ঐ জুতা, ঘাড়ের ঐ ব্যাগ কিংবা পকেটের ঐ মানি ব্যাগটার দিকে একবার তাকিও। সেগুলোতেও আমি মিশে আছি আমি...তোমার পাশে আজীবন থাকব বলে!
অন্যায়কারী মানুষকে তুমি ‘অমানুষ’ বল, প্লিজ ‘গরু’ বল না!

আমি জন্মতেও গরু, মরণেও গরু।
শুধু তুমিই জন্মাও মানুষ হয়ে... আর মারা যাও--
মানুষ হয়ে, অমানুষ হয়ে কিংবা অতিমানব হয়ে. —

No comments

Theme images by neomistyle. Powered by Blogger.